Religious Protests and Movements
জৈনধর্ম :
জৈনদের মতে ২৪ জন তীর্থঙ্কর বা সংসার দুঃখ পার হবার ঘাট ( বা জৈন ) নির্মাণ করেছিলেন বলে এই নামে পরিচিত। সর্বপ্রথম তীর্থঙ্কর ছিলেন ঋষবদেব এবং সর্ব শেষ তীর্থঙ্কর হলেন মহাবীর।
২৩ তম পার্শ্বনাথ ছিলেন জৈন ধর্মের প্রকৃত প্রবর্তক। মহাবীর মানুষের কাছে পোঁছে দেন।
পার্শ্বনাথ চতুর্যাম → অহিংসা , সত্য , অচৌর্য ( চুরি না করা ) ও অপরিগ্রহ ( বিষয় সম্পতির ওপর অনাসক্ত থাকা ) চালু করেছিলেন।
মহাবীর :
আনুমানিক ৫৪০ খ্রিস্ট পূর্বে বৈশালীর উপকূলে কুন্দপুর ( বর্তমানে মাজফরপুর জেলা ) , পিতা সিদ্ধার্থ , মাতা লিচ্ছবি বংশীয় রাজকন্যা ত্রিশলা , ক্ষত্রিয় পরিবার , স্ত্রী যশোদা এবং একটি কন্যা সন্তান হয়। ৩০ বৎসর বয়সে সংসার ত্যাগ। কঠোর ১২ বৎসর পরিশ্রমের পর , ঋজুপালিকা নদীর তীরে এক সাল গাছের নিচে সিদ্ধিলাভ করে জিন বা জিতেন্দ্রিয় নামে খ্যাত হয়। জিন থেকে তার শিষ্যদের জৈন বলা হয়।
৪৬৮ খ্রিস্ট পূর্ব ৭২ বছর বয়সে রাজগৃহের কাছে পাবা নগরীতে সেচ্ছামৃত্যু বরণ করেন।
পার্শ্বনাথএর প্রবর্তিত চতুর্যাম এর সাথে মহাবীর ব্রাম্ভচর্য যোগ করে 'পঞ্চ-মহাব্রত' চালু করেন। মহাবীরের মতে সত্য বিশ্বাস , সত্য জ্ঞান এবং সত্য আচরণ 'ত্রিরত্ন' নামে পরিচিত।
সিদ্ধিলাভ করে তিনি চিরতরে বস্ত্রত্যাগ করে নিগ্রস্ত্র ( গ্রন্তিহীন বা সংসার বন্ধনহীন ) হয়ে যান।
মগধরাজ বিম্বিসার , অজাতশত্রু ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এই ধর্মের সমার্থক। কথিত আছে যে চন্দ্রগুপ্তমৌর্য শেষ জীবনে জৈন ধৰ্ম গ্রহণ করে দাক্ষিণাত্যে সন্যাসীর মতো জীবন জাপন করতেন। কলিঙ্গ রাজ্ খর্বেল , কাথিয়াওয়াডের রাজা মুণ্ডলিক , গুজরাটের রাজা জয় সিংহ , কুমারপাঞ্চল এছাড়াও দাক্ষিণাত্য চালুক্য , রাষ্ট্রকূট ও গঙ্গা রাজাদের কথা উল্লেখযোগ্য।
মগধে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে , জৈন সন্যাসী ভদ্রবাহু এর নের্তৃত্বে বহু জৈন দক্ষিনে চলে যায় এদের 'দিগম্বর' বলাহয় এবং বাকিরা যারা স্থূলভদ্র এর নের্তৃত্বে মগধেই থেকে যায় এদের 'শেতাম্বর' বলা হয়।
ধর্মগ্রন্ধ :
ভদ্রবাহু রচিত 'কল্পসূত্র' জৈন ধর্মগ্রন্থের চোদ্দটি পর্বের পরিবর্তে বারোটি খন্ডে পরিণত হয় তা ' দ্বাদশঅঙ্গ '। জৈন ধর্মগ্রন্ধগুলি সব প্রাকৃত ভাষায় লেখা।
বৌদ্ধ :

যে স্থানে বুদ্ধত্ব লাভ করেন তার নাম হয় বোধগয়া বা বুদ্ধগয়া এবং যে বৃক্ষটির নিচে ধ্যানরত হন তার নাম হয় বদ্ধুম বা বোধিবৃক্ষ।
বুদ্ধ লাভের পর কাশিতে তিনি তাঁর পঞ্চভিক্ষুকে তার ধৰ্ম প্রচার করেন → বপ্য , ভদ্রিয়া , অশ্বজিৎ , মহাজান ও কৌন্তিণ্য।
৪৮৬ খ্রিস্ট পূর্ব ৮০ বছর বয়সে মল্ল রাজ্যের রাজধানী কুশি নগরে দেহত্যাগ করে। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর।
একদিন বৈশালী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বনী নগরীতে যে মহাজীবনের সূচনা হয়েছিল ৮০ বছর পর আর এক বৈশালী পূর্ণিমা তিথিতে তার আবাসন হয় যা মহাপরিনির্মান নামে খ্যাত।
* মহারাজ বিম্বিসার , কোসালরাজ প্রসেনজিৎ এবং তার মহিষী মল্লিকা বৌদ্ধ ধৰ্ম গ্রহণ করেন।
বুদ্ধের আর্যসত্য :
১. জগৎ দুঃখময়
২. বাসনা , কামনা , তৃষ্ণা ও আসক্তিই দুঃখের কারণ
৩. দুঃখের কারণ ধ্বংশ করে দুঃখের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়
৪. এই কারণ গুলি ধ্বংশের উপায় আছে
অষ্টমার্ক বা অষ্ট্যাঙ্গিক মার্ক :
১. সৎ ব্যাক ২. সৎ কর্ম ৩. সৎ জীবন ৪. সৎ চেষ্টা ৫. সৎ চিন্তা ৬. সৎ সংকল্প ৭. সৎ দৃষ্টি ৮. সৎ সমাধি
* বুদ্ধ পালি ভাষায় তার উপদেশ দান করতেন। তার জীবিত অবস্থায় কোনো ধর্মগ্রন্ধের উৎপত্তি হয়নি। তার নির্বাণ লাভের কয়েক সপ্তাহ পরেই মগধের রাজধানী রাজগৃহে (৩৮৬) অজাতশত্রুর উদ্যোগে প্রথম বৌদ্ধ সংগীত হয় এবং পালি ভাষায় রচিত ত্রিপিটক তৈরী হয়। পিটক কথার অর্থ হল পাত্র বা ঝুড়ি।
ত্রিপিটক এর তিনটি ভাগ :
সুত্ত পিটক : বুদ্ধের উপদেশ
বিনয় পিটক : বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং ভিক্ষুনীদের পালনীয় বিধি
অভিধর্ম পিটক : ধর্মের দার্শনিক তত্ত্ব সমূহ
* পালি সুত্তনিপাত , জাতক , মহাবংশ , দীপবংশ এবং সংস্কৃত গ্রন্থ লালিত বিস্তার থেকে বুদ্ধের জীবনী জানা যায়।
পরবর্তীকালে অশ্বঘোষ রচিত বুদ্ধচরিত এ সম্পর্কে সাহায্য করে।
'জাতক' বুদ্ধদেবের পূর্বজন্মের কাহিনী বিবৃত আছে।
* পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মে মতবিরোধ দেখাদিলে বৈশালী (৩৮৭) মগধ রাজ্ কালাসোক , পাটলিপুত্র (২৫১) অশোকের উদ্যোগে ও কাশ্মীর (মতান্তরে জলন্ধর) কণিষ্কের উদ্যোগে চতুর্থ বৌদ্ধ সম্বেলন বসে।
* কুশান রাজ্ কণিষ্কের রাজত্বকালে অনুষ্টিত চতুর্থ বৌদ্ধ সম্বেলনে বৌদ্ধরা 'মহাযান' এবং 'হীনযান' দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায়।
মহাযান : বুদ্ধমূর্তি পূজা ও ভক্তিবাদ গ্রহণ করে
হীনযান : বুদ্ধ প্রবর্তিত পথই ধরে সর্বপ্রকার পরিবর্তনের বিরোধিতা করেন
** রাজা বিম্বিসার , অজাতশত্রু ও প্রসেনজিৎ বৌদ্ধ ধৰ্ম গ্রহণ করেন এছাড়াও , ধনী বণিক , অনাথ পণ্ডিত , ব্রাম্ভ পণ্ডিত শরিপুত্র , সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষ, দস্যু অঙ্গুলিমাল , পতিতা আম্রপালি এই ধৰ্ম গ্রহণ করেন।
কালপঞ্জী
অনুশীলন :
১. তীর্থঙ্কর কথার অর্থ কি ? প্রথম তীর্থঙ্কর কে ?
২. পার্শ্বনাথ কে ?
৩. শেষ তীর্থঙ্কর কে ? জৈন ধর্মের প্রবর্তক কে ছিলেন ?
৪. বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মগ্রন্ধের নাম কি ?
৫. ত্রিপিটক কোন ভাষায় লেখা ?
৬. দিগম্বর ও শেতাম্বর কি ?
৭. মহাপরিনির্মান এবং মহাভিনিষ্ক্রমন কি ?
৮. আর্যসত্য এবং অষ্ট্যাঙ্গিক মার্ক কি ?
৯. চতুর্যাম কি ? পঞ্চ-মহাব্রত কি ?
১০. মহাযান এবং হীনযান কি ?
১১. মহাবীর কোথায় জন্মগ্রহন করেন এবং কোথায় মারাযান ? পিতা এবং মাতার নাম কি ?
১২. চারটি বৌদ্ধসংগীত কত সালে কোথায় হয়েছিল এবং কোন রাজা পরিচালনা করেছিল ?
১৩. জৈন ধৰ্ম কোন কোন রাজা গ্রহণ করেন ?
১৪. বৌদ্ধ ধৰ্ম কোন কোন রাজা গ্রহণ করেন ?
১৫. কোন কোন গ্রন্থ থেকে বুদ্ধের সম্পর্কে জানা যায় ?
১৬. কোথায় মহাবীর এবং বুদ্ধ সিদ্ধিলাভ করেন ?
১৭. জৈনদের ধর্মগ্রন্ধের নাম কর ?
১৮. গৌতম বুদ্ধ কোথায় জন্মগ্রহন করেন ?
উত্তর : আনুমানিক ৫৬৬ খ্রিস্ট পূর্ব , কপিলাবস্তুর কাছে লুম্বিনী উদ্যানে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধদেবের জন্ম হয়।
১৯. বুদ্ধ কথার অর্থ কী ?
উত্তর : বুদ্ধ কথার অর্থ হলো 'জ্ঞানী' , 'তথাগত' বা যিনি পারম জ্ঞানের সন্ধান পেয়েছেন।