অনেক সময় আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা ভূ - গর্ভের অত্যধিক চাপ ও প্রচণ্ড তাপে অথবা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আগেকার চেয়ে আরও কঠিন ও কেলাসিত হয়ে নতুন আর এক ধরণে শিলায় রূপান্তরিত হয় । পরিবর্তন ও রূপান্তরের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় বলে এই শিলাকে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত শিলা ( Metamorphic Rock ) বলে ।
গ্রীক ভাষায় ' Meta Morphic ' কথাটির অর্থ হল ' রূপান্তরিত ' । শুধু মাত্র আগ্নেয় বা পাললিক শিলাই নয় , অনেক রূপান্তরিত শিলাও পরবর্তী কালে আবার রূপান্তরিত হতে পারে।
উদাহরণ : ( ১ ) আগ্নেয় শিলা গ্রানাইট পাথর রূপান্তরিত হয়ে নাইস ( Gneiss ) পাথরে পরিণত হয়। ( ২ ) পাললিক শিলা চুনাপাথর রূপান্তরিত হয়ে মার্বেল বা শ্বেতপাথর সৃষ্টি করে ।
শিলা রূপান্তরিত হওয়ার কারণ :
( ১ ) অত্যধিক চাপের ফলে : ভূ - পৃষ্ঠের ওপরের শিলাস্তর নিচের শিলাস্তরের ওপর প্রচণ্ড চাপ দেয় । এছাড়া ভূ - আলোড়নের ফলে সংঘটিত প্রবল চাপের ফলে আগ্নেয় বা পাললিক শিলাসমূহ ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় ।
( ২ ) অত্যধিক তাপ : ভূমিকম্পের সময় ভূপৃষ্ঠের ওপরের শিলাস্তর ভূগর্ভে চাপা পড়ে গেলে ভূগর্ভের অত্যধিক তাপের প্রভাবে শিলার ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন হয় । এই পরিবর্তনের ফলে শিলা রূপান্তরিত হয় । এছাড়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূ - গর্ভ থেকে নির্গত প্রচণ্ড উত্তপ্ত গলিত পদার্থের লাভা বা উদ্বেধী আগ্নেয় শিলার সংস্পর্শে এলে অনেক সময় শিলার রূপান্তর ঘটে । তবে শিলার এই রূপান্তর খুব অল্প স্থান জুড়ে সংঘটিত হয় , এইজন্য এই রূপান্তরকে স্থানীয় রূপান্তর ( Local Metamorphism ) - ও বলে । তাপের ফলে এই রূপান্তর হয় বলে একে তাপ বা স্পর্শ রূপান্তর ( Thermal or Contact Metamorphism ) - ও বলা হয় । চুনাপাথর এইভাবে মার্বেলে রূপান্তরিত হয় ।
![]() |
উত্তাপের ফলে সৃষ্টি হাওয়া রূপান্তরিত শিলা |
( ৩ ) রাসায়নিক পরিবর্তন : অনেক সময় আগ্নেয় ও পাললিক শিলার মধ্যবর্তী খনিজ পদার্থগুলো রাসায়নিক ভাবে পরিবর্তিত হয় । এই রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলেও আগ্নেয় ও ` পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলা গঠিত হয় ।
( 8 ) চাপজনিত চলন : প্রবল চাপের ফলে ভূ - অভ্যন্তরের শিলা সমূহ নমনীয় হয় এবং গতিশীল হয়ে পড়ে । এই গতিশীল নমনীয় শিলাস্তরের মধ্যবর্তী বিভিন্ন খনিজ পদার্থ আলাদা ভাবে পরিবর্তিত হয় এবং শিলার রূপান্তর ঘটায় ।
পরিবর্তিত শিলা দৃঢ় - সংবদ্ধভাবে গঠিত হওয়ায় খুব ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় স্লেট , কোয়ার্টজাইট , নাইস এবং পুরুলিয়া জেলায় শ্বেতপাথর পাওয়া যায় ।
স্পর্শ - সংযোগ রূপান্তর কাকে বলে ? ( What is contact metamorphism ) :
গ্রীক ভাষায় ' Meta Morphic ' কথাটির অর্থ হল ‘ রূপান্তরিত ' । আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময় ভূগর্ভ থেকে নির্গত প্রচণ্ড উত্তপ্ত লাভার সংস্পর্শে এসে অথবা অনেক সময় আশপাশের শিলাসমূহ ভূগর্ভের মধ্যেই অত্যধিক তাপের ফলে রূপান্তরিত হয় । সংস্পর্শ ( Contact ) এই ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হওয়ায় অনেক সময় এই জাতীয় পরিবর্তনকে স্পর্শ সংযোগ রূপান্তর নামে অভিহিত করা হয় । তবে শিলার এই রূপান্তর খুব অল্প স্থান জুড়েই সংঘটিত হয় , সেইজন্য এই রূপান্তরকে স্থানীয় রূপান্তর - ও বলে । স্পর্শ - সংযোগ রূপান্তর প্রক্রিয়ায় বেলেপাথর কোয়ার্টজাইটে এবং চুনাপাথর মার্বেল - এ রূপান্তরিত হয় ।
আগ্নেয় ও পাললিক শিলা কালক্রমে কি ধরনের রূপান্তরিত শিলায় পরিবর্তিত হয় তা নীচে দেখান হল :
আগ্নেয় শিলা | রূপান্তরিত শিলা | পাললিক শিলা | রূপান্তরিত শিলা |
গ্রানাইট | নাইস (Gneiss) | বেলেপাথর | কোয়ার্টজাইট (Quartzite) |
ব্যাসল্ট | অ্যাম্ফিবোলাইট ইত্যাদি | চুনাপাথর | শ্বেতপাথর বা মার্বেল (Marble) |
অগাইট | হর্নব্লেড | কাদাপাথর | স্লেট (Slate) ও শিস্ট (Schist) |
রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য :
( ১ ) আগ্নেয় শিলা রূপান্তরিত হলে শিলার মধ্যে অবস্থিত খনিজগুলো একদিকে চলে আসে এবং আগ্নেয় শিলা থেকে উৎপন্ন রূপান্তরিত শিলা খুব ভালো স্ফটিকযুক্ত হয় ।
( ২ ) পাললিক শিলা রূপান্তরিত হলে তা আগের থেকেও কঠিন হয় ।
( ৩ ) প্রচণ্ড তাপ ও চাপে নষ্ট হয়ে যাবার ফলে পাললিক শিলা থেকে উৎপন্ন রূপান্তরিত শিলার মধ্যে জীবাশ্ম দেখা যায় না ।
( ৪ ) রূপান্তরিত শিলা কঠিন ও ভারী ।